1. admin@bomkesh.news : অ্যাডমিন :
সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০২:১৭ পূর্বাহ্ন

সফল উদ্যোক্তা জয়পুরহাটের বিথী

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০২২
  • ১৬১ বার পঠিত

একসময় বলদ (গরু) দিয়ে কাঠের তৈরি ঘানিতে ভাঙানো হতো সরিষা। ঘানিতে ভাঙানো সরিষার তেল দিয়েই মিটত সংসারের তেলের চাহিদা। কিন্তু বর্তমানে এই ঘানি প্রত্যন্ত গ্রামেও খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই শতভাগ খাঁটি তেল এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল নয়, দুষ্কর।

তবে আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বৈদ্যুতিক মেশিন ব্যবহার করে কাঠের ঘানি তৈরি করে তেল ভাঙা যায়, তা প্রমাণ করেছেন জয়পুরহাটের নারী উদ্যোক্তা বিথী পারভীন। বিথী পারভিন জয়পুরহাট সদরের দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামের বাসিন্দা ওয়ালীউল হাসান রিপনের স্ত্রী। তিনি দুই কন্যাসন্তানের মা। ২০১৯ সালে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ থেকে ইসলামের ইতিহাস বিষয়ে মাস্টার্স সম্পন্ন করা বিথী গৃহিণী হিসেবে বাড়িতেই ছিলেন।

কিন্তু এতে তিনি স্থির থাকতে পারেননি। হঠাৎ একদিন বাদাম তেল তৈরির কথা চিন্তা করেন। তবে মেশিনে ভাঙা তেল নয়। কাঠের ঘানিতে ভাঙা কোল্ড প্রেস তেল। তাই স্বামীর সঙ্গে বিষয়টি আলোচনা করে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে শুরু করেন। কাঠের ঘানির তেল করতে বলদ গরুর প্রয়োজন। সেটি তিনি মিটিয়েছেন বৈদ্যুতিক মেশিন দিয়ে। এরপর থেকেই চলছে কাঠের ঘানিতে বাদাম তেল উৎপাদন।

শুধু বাদাম তেল নয়, এখন সরিষা, কালোজিরা ও সূর্যমুখী তেল উৎপাদনের পরিকল্পনা করছেন বিথী। তার প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন ‘জয়পুরী অর্গানিক ফুড’। সেখানে এক কেজি বাদাম বা সরিষা থেকে ২৫০ গ্রাম তেল উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিদিন ১০ কেজি পর্যন্ত বাদাম ভাঙানো হয়।

উদ্যোক্তা বিথী পারভীন বলেন, হঠাৎ মাথায় আসে বাদামের তেল প্রক্রিয়াজাতের কথা। এটা এখন বাজারে পাওয়া যায় না। তাও আবার ঘানিতে ভাঙা। এরপর বিষয়টি আমার স্বামীকে জানালাম, সেও আগ্রহী হলো। আমরা কাঠের ঘানি করলাম এবং তেল ভাঙা শুরু করলাম। এখন আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে।

বিথীর স্বামী ওয়ালীউল হাসান রিপন বলেন, স্ত্রীর কথায় আমি বিভিন্নজনের সঙ্গে পরামর্শ করি। এরপর কাঠের ঘানিতে করা যায় কি না, তা নিয়ে ইউটিউবে ভিডিও দেখি। পরে কাঠের ঘানি প্রস্তুত করে বাদাম তেল তৈরি শুরু করি। এ তেল কোল্ড প্রেস অর্থাৎ মেশিনে ভাঙা তেলের মতো, গরম হবে না। এই তেলের গুণাগুণ অক্ষুণ্ন থাকে।

বাদাম তেলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকেই রান্না, ত্বকের পরিচর্যা, চুলে দেওয়া, বাচ্চাদের বিভিন্ন খাবার তৈরির জন্য এই তেল কিনছেন। এই তেলে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বর্তমান প্রতি লিটার বাদাম তেল ৮৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদম নির্ভেজাল ও খাঁটি তেল গ্রাহকদের সরবরাহের জন্য চেষ্টা করছি।

জয়পুরহাট শহর থেকে পরিবারের সদস্যদের জন্য বাদাম তেল কিনতে এসেছেন হাসিবুল হাসান। তিনি বলেন, আমি জেনেছি বাদাম তেল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু আমি বাদাম তেল খুঁজে পাইনি কোথাও। পরে শুনলাম নারী উদ্যোক্তা বিথী এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি এবং বাদাম তেল সংগ্রহ করি। আগে নিয়েছি তা শেষ হওয়ায় আবার নিতে এসেছি। এই তেল খাওয়া ও শরীরে ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া ভালো।

নিয়মিত বাদাম তেল কেনেন জয়পুরহাট শহরের খঞ্জনপুর এলাকার নুরুজ্জামান বাবু। তিনি বলেন, আমরা কাঠের ঘানিতে ভাঙা কোল্ড প্রেস বাদাম তেল পাচ্ছি। এই তেল স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। ব্লাড পেসার ও ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য এ তেল উপকারী। আমরাও এটা ব্যবহার করছি এবং প্রতিবেশী-স্বজনদেরও ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করছি। আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি ঘানি ভাঙা তেল অন্য কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য এর দাম বেশি হলেও আমরা কিনছি।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জেলা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, কাঠের ঘানিতে তেল ভাঙা একটি হারানো ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছেন বিথী পারভিন। তিনি ঘানিতে করে বাদাম থেকে তেল তৈরি করছেন। বাদাম তেলে সরিষা ও সয়াবিনের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব। এ ছাড়া এই তেলে রয়েছে প্রোটিন, যেটা আমাদের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়।

তিনি আরও বলেন, এই উদ্যোক্তার যদি পণ্য বিপণনে কোনো সহযোগিতা লাগে, সে ক্ষেত্রে আমরা মেলাসহ অনলাইন গ্রুপ, ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রির ব্যবস্থা করে দেব। সেই সঙ্গে বিএসটিআইয়ে নিবন্ধন করার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এ ছাড়া তার আর্থিক কোনো সহযোগিতা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়, তা দিয়ে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।

বাদাম তেলের গুণাগুণ:—

সয়াবিন তেলের বিকল্প হতে পারে বাদামের তেল। তবে দাম বেশ চড়া। বাদাম তেলের রয়েছে বেশ গুণাগুণ। এই তেলের উপকারিতা নিয়ে কথা বলেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্যবিজ্ঞান ও পুষ্টি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. এন এইচ রুবেল মজুমদার।

তিনি বলেন, বাদাম তেল উদ্ভিদজাত খাদ্য। আমাদেশ দেশে সরিষা বা সয়াবিনের পরই দেখা যাচ্ছে গৃহস্থালিভাবে এই বাদাম তেল উৎপাদন করা হয়। এর উৎপাদনে বিভিন্ন প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়। তার মধ্যে প্রাচীনতম একটি পদ্ধতি হলো সরিষার তেলের ঘানি ভাঙা। এই প্রক্রিয়ায় বাদাম তেল ভাঙলে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে যেন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রির ওপরে উঠবে না অর্থাৎ ইংরেজিতে একে কোল্ড প্রেস বলা হয়।

যেহেতু বাদাম প্রাকৃতিক উদ্ভিদজাত উপাদান থেকে আসে, এ জন্য এতে কোলেস্টেরল থাকে না। আমরা প্রাণিজ উৎস থেকে যেসব তেল পাই, সেখানে কোলেস্টেলের পরিমাণ বেশি থাকে। এই বাদাম তেলে অন্যতম ভিটামিন ‘ই’ থাকে। এই ভিটামিন ‘ই’ শরীরের বিভিন্ন ধরনের ত্বক, চুল এবং আমাদের মস্তিষ্কের কোষগুলোর সুস্থতার জন্য কাজ করে।

এই পুষ্টিবিজ্ঞানী বলেন, বাদাম তেলে মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড (এমইউএফএ) থাকে। এই অ্যাসিডে আমরা সবচেয়ে বেশি পাই ডাবল বন্ড। ফলে আমাদের হৃদস্বাস্থ্যে কাজ করে। এই অ্যাসিড শরীরের অন্যান্য ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে। অন্য ভোজ্যতেলে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। বাদাম তেলে কারসোনচারিক উপাদান কম থাকায় কানসার হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায় এবং অন্যান্য ইনফ্লোমন্টারি ডিজিজগুলো কম থাকে। বাদাম তেলের ব্যবহারটা আমরা গৃহস্থালিতে রান্নার কাজে বিশেষ করে ভাজা, খাদ্য প্রস্তুতিতে, পাশাপাশি ইন্ডাস্ট্রিয়াল চিপস ভাজা অথবা বেকারি পণ্য তৈরিতেও ব্যবহার করতে পারি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Bomkesh.News
Theme Customized By Shakil IT Park