নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে জনজীবন। তিন বেলা খাবার জোগাতে নিম্ন আয়ের মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। ঠিক এই সময়ে ২০ টাকায় পাওয়া যায় এক বেলার খাবার। এতে এক প্লেট ভাতের সঙ্গে থাকে আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা, আলু ভাজি, পটল ভাজি, শাক ভাজি ও অর্ধেক সিদ্ধ ডিমসহ ছয়টি আইটেম।
শুনতে অবাক লাগলেও ব্যতিক্রমী এই আয়োজন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) স্টেশনবাজারের হোটেল ব্যবসায়ী মানিক মিঞা। দামে কম ও মানে ভালো হওয়ায় তার দোকানে থাকে শিক্ষার্থীদের উপচেপড়া ভিড়।
দামে কম বলে অবহেলা করারও সুযোগ নেই দোকানটিকে। রাবি ক্যাম্পাসে ‘সিস্টেম’ বেশ জনপ্রিয়। সিস্টেমের আসল নাম ‘সিক্স আইটেম’। মুখে মুখে ডাকনাম হয়ে গেছে সিস্টেম। খাবারটি ছয়টি আইটেম দিয়ে পরিবেশন করা হয় বলে শিক্ষার্থীদের কাছে এটি ‘সিস্টেম’ নামে বহুল প্রচলিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে বহুল পরিচিত এই খাবারের দোকানটির নাম ‘হোটেল মাদারীপুর’। এই খাবারের জনক মানিক মিঞা। তিনি খুব ছোটবেলায় জীবিকার সন্ধানে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চলে আসেন রাজশাহীতে। এরপর স্থায়ীভাবে থাকছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকায়। তার বয়স এখন প্রায় পঞ্চান্নের কোঠায়। আগে রিকশা চালালেও প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই হোটেলের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ক্যাম্পাসের স্টেশন বাজারে হোটেল মাদারীপুরে দুপুর ও রাতে পাওয়া যায় এ খাবার। এর পাশেই রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের আবাসিক হল মাদার বখ্শ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী। কিছুটা দূরে রয়েছে শহীদ শামসুজ্জোহা ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো এই দোকানটির পাশে হওয়ায় শিক্ষার্থীরা স্বাচ্ছন্দ্যে আসেন খাবার খেতে। তবে পছন্দের এই খাবারের লোভে অনেক শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসের বাইরে থেকেও আসেন। আগে শুধু রাতে এই খাবার তৈরি করা হলেও প্রায় এক বছর ধরে শিক্ষার্থীদের কারণে দুপুরেও ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান হোটেল মালিক।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে চলে গেছেন অথচ হোটেল মাদারীপুরের সিস্টেম খাননি এমন শিক্ষার্থী খুব কমই আছেন বলে জানান এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই সাবেক ছাত্র ও বর্তমানে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. জামিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার আগে বন্ধুদের সঙ্গে হৈ-হুল্লোড় করে এ খাবার খাওয়া হতো। তবে এখন আর স্টেশনবাজারে তেমন যাওয়া হয় না। তাই ছাত্র জীবনের সেই স্বাদের খাবার আর খাওয়া হয় না।
হোটেল মালিক মানিক মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে হোটেল মাদারীপুরে সিস্টেম চালু আছে। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে সিস্টেম মিলতো মাত্র ছয় টাকায়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় ছয় টাকা থেকে ক্রমান্বয়ে বেড়ে সিস্টেমের দাম ২০ টাকা হয়েছে। তিনি বলেন, ছয় পদের খাবারের মধ্যে রয়েছে আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা, আলু ভাজি, পটল ভাজি, শাক ভাজি ও অর্ধেক সিদ্ধ ডিম। ডাল অবশ্য সবার জন্য ফ্রি। দোকানে মাছ-মাংস থাকলেও শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় সিস্টেমের কদরই সবচেয়ে বেশি।
হোটেলটির নামকরণ নিয়ে জানতে চাইলে মানিক মিঞা বলেন, আগে এই দোকানের যিনি মালিক ছিলেন তার বাড়ি ছিল মাদারীপুর জেলায়। তিনি নিজ জেলার নামেই খাবারের দোকানের নাম রেখেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এ দোকান চালু করা হয় বলেও জানান তিনি।
Leave a Reply