কবি ও লেখক ইকবাল কাগজীর (৬৫) টানাপোড়েনের সংসার। আর দশজনের মতো বন্যায় তাঁরও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা সাত দিন ছিলেন অন্য জায়গায়। ঘর, আসবাব, বিছানাপত্রের ক্ষতি তিনি মেনে নিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু যে ক্ষতির জন্য তাঁর বুক ভেঙে যাচ্ছে, তা হলো তাঁর ৩০ বছরের বইপত্র, পত্রিকা, দেশি-বিদেশি ম্যাগাজিনের বিশাল সংগ্রহের। টাকার অঙ্কে সেই ক্ষতি নির্ণয় করা কঠিন।
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাজিপাড়া এলাকার একটি ছোট টিনশেড ঘরে ইকবাল কাগজীর বসবাস। পরিবার বলতে স্ত্রী আর দুই মেয়ে। দুই মেয়ে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শহরের ছোট-বড় সবার কাছে তিনি সোজা কথার মানুষ হিসেবে পরিচিত।
সোমবার ইকবাল কাগজী বলেন, ‘আমার মন ভালো নেই। মাথা খারাপ অইগিছে। ৩০ বছরে তিল তিল করে গড়া সম্পদ শেষ। তোমরা আমার এসব উদ্ধার কইরা দেও। আমি চাল-ডাল চাই না।’
শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা ‘সুনামগঞ্জে বঙ্গবন্ধু ও তৎকালীন রাজনীতি’ গ্রন্থের লেখক ও গবেষক কল্লোল তালুকদারেরও (৪৭) বন্যায় অনেক বইপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিজের কষ্ট বুকে চেপে গতকাল রোববার খোঁজ নিতে কবি ইকবাল কাগজীর বাড়িতে যান তিনি। কাগজীর সর্বনাশ দেখে খুব কষ্ট পেয়েছেন তিনি।
নিজের ফেসবুকে কল্লোল তালুকদার লিখেছেন, ‘জীবনে কখনো টাকাপয়সার পেছনে ছোটেননি। নিদারুণ অভাব-অনটনের মধ্যেই যাপিত জীবন। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম যেটুকু প্রয়োজন, ততটুকু পেলেই যেন তিনি খুশি। জীবনের মানেই হয়তো তাঁর কাছে অন্য রকম! তবে কাগজীর ঘরে যে ধন আছে, অনেক উচ্চশিক্ষিত উচ্চবিত্তের ঘরেও তা নেই। তাঁর ঘরভর্তি কেবল বই আর বই। সারা জীবন তিলে তিলে গড়েছেন বইয়ের বিশাল সংগ্রহ। দারিদ্র্যকে উপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকা তাঁর ঘরটি যেন এক জ্ঞানমন্দির।’
Leave a Reply