ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। যা স্থানীয়দের কাছে নবাব প্যালেস বা নবাব মঞ্জিল নামে বেশ পরিচিত।
প্রায় ১৮০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে এই জমিদার বংশ বা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন ব্রিটিশদের কাছ থেকে বাহাদুর, নওয়াব, সি.আই.ই খেতাবপ্রাপ্ত জমিদার খান বাহাদুর সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরী। যিনি ব্রিটিশ শাসনকালে প্রথম মুসলিম হিসেবে ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রীত্বের পদ লাভ করেন। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম এবং বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রথম প্রস্তাবক ছিলেন তিনি। তবে একটি সূত্রমতে মোঘল শাসনামলে সেনাপতি ইস্পিঞ্জর খাঁ ও মোনোয়ার খাঁ সিংহ নামের একজনকে পরাজিত করে উক্ত জমিদারীর সূচনা করেন। তবে এই জমিদার বাড়ির প্রসিদ্ধ প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সৈয়দ নবাব আলী চৌধুরীকেই ধরা হয়। যদিও তার বাবা এখানে এসে প্রথমে বসতি স্থাপন করেন। তিনি বেশ সুনামের সাথে উক্ত জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। এরপর জমিদারী আমল থেকে এখন পর্যন্ত তার বংশধররা উক্ত জমিদারীর আওতায় থাকায় সবকিছু দেখভাল করছেন।
এই জমিদার বংশের একজন মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এবং আরেকজন সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পূর্ব পাকিস্তানের শিল্প মন্ত্রী ও বাংলাদেশ গঠনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বি.এন.পি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
জমিদারদের বসবাসের জন্য বিভিন্ন ধরনের নকশা খচিত ছোট বড় মিলে বিশাল এক ভবন। পুরো বাড়ি জুড়ে বেশ সু-সজ্জিত বাগান রয়েছে। ভবনের পূর্বদিকে প্রায় ত্রিশ বিঘা জায়গা নিয়ে বিশাল দিঘি রয়েছে। বাড়িটিতে আরো রয়েছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, গোমস্তা, নায়েব, পাইকপেয়াদার বসতি ঘর, কাছারিঘর এবং দাস-দাসীদের চত্বর। এছাড়াও প্রায় সাতশত বছরের পুরোনো মোগল আদলে তৈরি করা একটি মসজিদ। যা এখানে ধনবাড়ী মসজিদ নামে পরিচিত। এই মসজিদের পাশেই নবাব আলী চৌধুরীর কবর বা মাজার রয়েছে। যেখানে নবাব আলীর মৃত্যুর পর থেকে অদ্যাবধি চারজন ক্বারী দ্বারা প্রতিনিয়ত পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করা হচ্ছে।
জমিদার বংশধরদের আওতায় উক্ত জমিদার সম্পত্তি থাকায় এখনো জমিদার বাড়ির সকল স্থাপনা বেশ ভালো অবস্থায় আছে। বর্তমানে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান “লাইট হাউস” উক্ত জমিদারীর দেখভালের দায়িত্বে আছেন। তারা এটির নাম দিয়েছেন “রয়্যাল রিসোর্ট।”
Leave a Reply