সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলীর পুরোনো বাস টার্মিনালের আট একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্বাধুনিক বাস টার্মিনাল।
সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলীর পুরোনো বাস টার্মিনালের আট একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হচ্ছে দেশের সর্বাধুনিক বাস টার্মিনাল। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যের ঐতিহ্য আসাম ধাঁচের বাড়ি এবং চাঁদনীঘাটের ঘড়ির আদলে এ টার্মিনালের নকশা করা হয়েছে। প্রায় ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণকাজ শেষ পর্যায়ে। ২০২০ সালের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তা পিছিয়ে যায়। চলতি মাসেই এটির উদ্বোধন হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, এ মাসেই টার্মিনালের কাজ শেষে উদ্বোধনের তারিখ ঠিক করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে এ টার্মিনাল উদ্বোধন করানোর ইচ্ছা আমাদের।
সিসিক সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে এমজিএসপি (মিউনিসিপাল গভর্নমেন্ট সার্ভিস প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় সিসিকের উদ্যোগে এ টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। ছয়তলা ভিত্তির তিনতলা কমপ্লেক্স প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ডালি কনস্ট্রাকশন।
টার্মিনালের নকশা করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের তিন শিক্ষক-সুব্রত দাশ, রবিন দে ও মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন। এখানে রয়েছে কারুকার্যময় লাল ইটের দেওয়াল, ইট রঙের স্টিলের ছাউনি, গাছপালা আবৃত গ্রিন জোন, বিমানবন্দরের আদলে আলাদা প্রবেশ ও বহির্গমন পথ, যাত্রীদের জন্য প্রায় দেড় হাজার আসনের বিশাল ওয়েটিং লাউঞ্জ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরো টার্মিনালের নির্মাণকাজ তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম অংশের বহির্গমন ভবনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৩০০ ফুট। এ অংশে ৪৮টি বাস থাকতে পারবে। এছাড়া যাত্রীদের বসার জন্য রয়েছে ৯৭০ আসনের হল। রয়েছে ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, ৩০টি টিকিট কাউন্টার এবং নামাজঘর।
এছাড়া রয়েছে পুরুষ-নারী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন লোকদের ব্যবহার উপযোগী ছয়টি টয়লেট। প্রয়োজনে হুইলচেয়ার নিয়েও টয়লেট ব্যবহার করা যাবে। উপরে ওঠার জন্য রয়েছে লিফট এবং খাবারের জন্য রেস্টুরেন্ট ও ফুডকোর্ট। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়া যাত্রীর জন্য আলাদা শয্যা ও শিশুদের জন্য ব্রেস্ট ফিডিং জোন থাকছে। দ্বিতীয় অংশের আগমনী ভবন প্রায় ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যরে। এখানে রয়েছে বাসযাত্রীদের বসার জন্য ৫১০ আসনের স্থান এবং ৩০ আসনের ভিআইপি কক্ষ, আধুনিক টয়লেট সুবিধা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, লিফট, রেস্টুরেন্টসহ অন্যান্য সুবিধা।
আগমন ও বহির্গমন অংশ আলাদা করা হলেও করিডোরের মাধ্যমে পুরো স্থাপনাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এ বিল্ডিংয়ের পশ্চিম-দক্ষিণ কোণে সড়কের সঙ্গে গোলাকার পাঁচতলা টাওয়ার বিল্ডিংয়ে রয়েছে টার্মিনাল পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনা অফিস। সেখানে থাকবে পুরো টার্মিনালের সিকিউরিটি কন্ট্রোল ও সিসিটিভি মনিটরিং কক্ষ, পুলিশ কক্ষ এবং পর্যটন অফিস। টার্মিনালের পেছনের দিকে তৃতীয় অংশে নির্মিত হয়েছে একটি মাল্টিপারপাস ওয়েলফেয়ার সেন্টার। যেখানে মালিক ও চালক সমিতির জন্য থাকবে ২৪ শয্যার বিশ্রাম কক্ষ, গোসলের ব্যবস্থা, অফিস, লকার ব্যবস্থা, ক্যান্টিন, সভা ও অনুষ্ঠানের জন্য মিলনায়তন।
সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, এই টার্মিনাল পরিচালনার জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ চলছে। এখানে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা ও যাত্রী ওঠানামা করা যাবে না। ইচ্ছামতো কাউন্টার বসানো যাবে না। পরিবহণ মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বসেই আমরা এ ব্যাপারে একটি নীতিমালা তৈরি করব।
Leave a Reply