1. admin@bomkesh.news : অ্যাডমিন :
সোমবার, ২৯ মে ২০২৩, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন

ঢাকায় হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন পেশাসমূহ

  • আপডেট সময় : রবিবার, ৩১ জুলাই, ২০২২
  • ১৪৭ বার পঠিত

১.বাইজি:
বাইজিদের সম্পর্কে সাধারণ ঢাকাবাসীদের মধ্যে কৌতুহল ছিল। বাইজিদের বিশেষ ধরনের জীবনযাপন,কঠোর পর্দার মধ্যে বসবাস এবং প্রহরীদের প্রহরায় ঘোড়াগাড়ীতে যাতায়াতের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাদের সম্পর্কে অনেক কৌতুহল ছিল। পাটুয়াটুলীর বাইজিরা সঙ্গীদের নিয়ে হেঁটে খুব সকালে অদূরে বুড়িগঙ্গা নদীতে গোসলে যেত। তখন বুড়ীগঙ্গা নদীর পানি ছিল খুবই স্বচ্ছ ও সুপেয়। গোসল পর্ব শেষে বাইজিরা যখন ফিরতো তখন লোকজন গলির মুখে দাড়িয়ে থেকে সিক্ত বসনা বাইজিদের দেখে পুলকিত হতো। কারণ এছাড়া সাধারন মানুষের পক্ষে বাইজিদের দেখার আর কোন সুযোগ ছিল না।
ইংরেজ শাসন স্থায়ী হওয়ার পর বাইজি পেশায় ধীরে ধীরে ধস নামে। ঢাকার বাইজি পাড়ায়ও লাগে এর হাওয়া। নবাব,জমিদারদের আয়ের উৎস কমে যেতে থাকে। তাদের পৃষ্টপোষকতা করা আর সম্ভব হয়নি। তখন ঢাকায় নব্য ধনি শ্রেনীর জন্ম হয়,এরা বাইজিদের নাচ-গান উপভোগের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ রমনীদের সঙ্গে বলড্যান্স উপভোগ করতে অধিক অর্থ ব্যয় করতে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এভাবেই ঢাকা শহর থেকে বাইজিরা হারিয়ে যেতে থাকে।

২.ভিস্তিওয়ালা:
১৮৭৮ সালে ঢাকা শহরে আধুনিক সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে ঢাকায় খাবার পানির উৎস ছিল পুকুর,কুয়া,নদী।সে সময় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে মশক (চামড়ার ব্যাগ)-এ করে ঢাকা শহরের বাসায় বাসায় খাবার পানি পৌঁছে দিতো। এ ধরনের পেশাজীবীদের বলা হত ‘ভিস্তিওয়ালা’ বা ‘সুক্কা’। আর ভিস্তিওয়ালা বা সুক্কা-রা পুরান ঢাকার যে এলাকায় বাস করতো সেটা কালক্রমে ‘সিক্কাটুলি’ নামে পরিচিত হয়।

৩.বাতিওয়ালা
বর্তমানে বাতিওয়ালা ঢাকার বিলুপ্ত পেশাজীবী। একসময় রাত হলেই ঢাকা তখন ঘুটঘুটে এক অন্ধকার শহরে পরিনত হত। ঢাকার রাস্তার পাশে কেরোসিনের বাতি জ্বালানো শুরু হয় ১৮৭৭ সালে। হঠাৎ করেই ঢাকা শহরে এক নতুন পেশাদার শ্রেণির উদ্ভব হয়। বাতিওয়ালারা প্রতি সন্ধ্যায় মই বেয়ে ল্যাম্প পোস্টে উঠে সঙ্গে আনা কেরোসিন ভরে সেগুলোতে আলো জ্বালিয়ে দিয়ে যেত। ঢাকার শেষ বাতিওয়ালার নাম দক্ষিণারঞ্জন রাউত। ১৯৫২-১৯৫৩ সালের পরে এই ব্যবস্থা উঠে যাওয়ার পর তিনি ওই পেশা থেকে অবসর নেন।

৪.পাঙ্খাওয়ালা
হাতপাখা নির্ভর এই পেশাজীবীদের অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাজা-জমিদারদের আমলে এই পেশাজীবীদের অনেক কদর ছিল।বড় আকারের তালপাখার নাম ছিল আরানি,ছোটগুলোর নাম আরবাকি।

৫.গোয়ালা:
এক সময় ঢাকা শহরে গোয়ালাদের বসবাস ছিল। তারা গরু লালন-পালন করত এবং শহরবাসীর নিকট দুধ সরবরাহ করত। দুধ সরবরাহ ছাড়াও তারা দুধ দিয়ে ঘি, দই,ছানা তৈরি করত। ঢাকার মিষ্টি তৈরিকারকরা দুধের জন্য গোয়ালাদের উপর দারুণভাবে নির্ভরশীল ছিল। ১৮৩০ সালের আদমশুমারি থেকে জানা যায় যে,তখন ঢাকায় ৩৮২ ঘর হিন্দু গোয়ালা বাস করত।

৬.সাপুড়ে:
মোগল ঢাকা তো বটেই, ব্রিটিশ আমল পর্যন্ত ঢাকায় জলা-জঙ্গলের অভাব ছিল না। ফলে সাপও ছিল প্রচুর। সাপুড়েও ছিল। তবে মূল শহর থেকে এই পেশা হারিয়ে গেছে। এখনো মাঝে মাঝে এদেরকে দেখা যায়।

৭.ধুনারি:
তুলা ধুনা একটি অতি প্রাচীন পেশা। তুলা ধুনা করা পেশাজীবীরা লেপ,বালিশ ও তোষক প্রস্তুত করত। অতীতে এরা গ্রামে-শহরে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তুলা ধুনা এবং লেপ, বালিশ ইত্যাদি তৈরির কাজ নিত। বর্তমানে ঢাকা শহরে এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে, তারা এখন লেপ-তোষক ইত্যাদি তৈরির বড় বড় দোকানে শ্রমিকের কাজ করে থাকে। ঢাকা শহরের ধুনারিরা,যারা মুসলমান ছিল,তারা বিহার থেকে এসেছিল বলে জানা যায়।

৮.নৈচাবন্দ ও টিকাওয়ালা:
ঢাকা শহরে সবাই ধূমপানের জন্য সিগারেটকেই বেছে নেন। সময়ের সাথে সাথে হুঁকা নামের ধূমপানের বস্তুটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু একসময় এই ঢাকা শহরেই ছিল উপমহাদেশের বৃহত্তম হুঁকা বানানোর শিল্প। এই হুঁকার নল যারা বানাতো তাদের বলা হতো নৈচাবন্দ। ঢাকার নৈচাবন্দরা মূলত আসতো সিলেট থেকে। শিশু, জাম,জারুল,শিমুল কাঠ দিয়ে নৈচা বানানো হতো।

আজকের ঢাকার যে টিকাটুলি এলাকা তা ছিল মূলত হুঁকার টিকাদারদের আবাসস্থল। টিকাটুলির এই টিকাদাররা অতিসাধারণ টিকিয়াকে অসাধারণ শিল্পে পরিণত করেছিলো। তাদের তৈরি টিকিয়ার কোন তুলনা ছিলো না। এগুলো এতো হাল্কা ও দাহ্য ছিলো যে,দিয়াশলাইয়ের একটা শলা দিয়েই অনেকগুলো টিকিয়াতে আগুন ধরানো যেতো।

ঢাকার নৈচার কারিগররা যেখানে বসবাস করতেন তা নৈচাবন্দটোলা নামে পরিচিত ছিল। এর অবস্থান ছিল বর্তমান সদরঘাটের কাছে।পরে তা বুড়িগঙ্গার বক্ষে বিলীন হয়ে যায়। পরে আস্তে আস্তে হুকোর জায়গা সস্তা ও সহজে বহনযোগ্য বিড়ি দখল করে নেয়।আস্তে আস্তে ঢাকা থেকে নৈচা তৈরির কারিগররা সম্পূর্ন বিলুপ্ত হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও খবর

ফেসবুকে আমরা

© All rights reserved © 2022 Bomkesh.News
Theme Customized By Shakil IT Park