বিদ্যুৎ ও জ্বালানির চলমান সংকট কাটাতে সাশ্রয়ের পথে হাঁটছে সরকার। সেই প্রেক্ষাপটে আজ মঙ্গলবার এলাকাভিত্তিক বিদ্যুতের শিডিউল লোডশেডিং শুরু হচ্ছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টার মধ্যে আপাতত এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং করা হবে। খরচ কমাতে ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সাময়িক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সপ্তাহে এক দিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ এবং অফিসের সময়সূচি কমিয়ে আনার বিষয়টিও ভাবছে সরকার। সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অফিস-আদালত ও উপাসনালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) যন্ত্র ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাত ৮টার পর দোকানপাট, বিপণিবিতান খোলা রাখলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কঠোর বার্তা দিয়েছে সরকার।
বিদ্যমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ সংশ্নিষ্ট খাতের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এসব সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা নেওয়া হয়।
করোনা-পরবর্তী চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এলএনজি, জ্বালানি তেল সবকিছুর দাম আকাশচুম্বী। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলারের দাম। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় চাপ পড়ছে রিজার্ভে। খোলাবাজারে ডলারের বিনিময় হার ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ডলার সঞ্চিতিতে ঘাটতি তৈরি হলে সামনে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে, যার নজির দেখা যাচ্ছে প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায়।
প্রায় শতভাগ জ্বালানি তেল আমদানি করে বাংলাদেশ। এর মধ্যে পরিবহন খাতে ৯০ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় ৩৪ শতাংশ তেল। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১০০ ডলার। সরবরাহ করা গ্যাসের ২৫ শতাংশ আমদানি করা হয়। স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম ৪০ ডলারে পৌঁছেছে। তাই বাংলাদেশ খোলাবাজার থেকে কিনছে না এলএনজি। এতে দিনে কমেছে ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ। ফলে কমে গেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ প্রেক্ষাপটে দেশে আবার ফিরেছে লোডশেডিং।
Leave a Reply